কোষ্ঠকাঠিন্য-কারণ, লক্ষণ / উপসর্গ, বেঁচে থাকার উপায়,জটিলতা, চিকিৎসা

কোষ্ঠকাঠিন্য-কারণ, লক্ষণ / উপসর্গ, বেঁচে থাকার উপায়,জটিলতা, চিকিৎসা

Written by Dr.Md.Redwanul Huq (Masum)
Tuesday, 16 September 2014 11:29

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ভালোভাবে জীবনযাপন করাটাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। শৌচাগারে লম্বা সময় কাটিয়েও অনেক ক্ষেত্রে মল পরিষ্কার হয় না। এ যেন সেই ছোট গল্পের মতো “শেষ হইয়াও হইল না শেষ”। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, পরীক্ষার হল, অফিস বা অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যেতে এ কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্বের শিকার হতে হয়, শরীরে দেখা দেয় নানা রকম অসুবিধা। অনেকে তো কোষ্ঠকাঠিন্যের ভয়ে নানা ধরনের খাবার খাওয়াও ছেড়ে দেন। হয় তো আপনিও এই সমস্যায় ভুগছেন। তাহলে আমার আজকের আর্টিকেল টি আপনার জন্যই লেখা।

কোষ্ঠকাঠিন্য বলতে কি বুঝায়?

এখানে, কোষ্ঠ অর্থ হচ্ছে মলাশয় আর কোষ্ঠকাঠিন্য অর্থ হচ্ছে মলাশয়ের মল ঠিকমতো পরিষ্কার না হওয়া বা মলে কাঠিন্যহেতু মলত্যাগে কষ্টবোধ হওয়া।
সংজ্ঞাঃ যথেষ্ট পরিমাণ আঁশজাতীয় বা সেলুলোজ জাতীয় খাবার খাওয়ার পরও যদি সপ্তাহে তিন বারের কম স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত মলত্যাগ হয়, তবে তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণঃ

১) বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর কারণ অজানা
২) সুষম খাবার, আঁশজাতীয় খাবার কম খাওয়া
৩) পানি কম পান করা
৪) শর্করা বা আমিষ যুক্ত খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া
৫) ফাস্টফুড, মশলাযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া
৬) সময়মত খাবার না খাওয়া
৭) কায়িক পরিশ্রম কম করা
৮) দুশ্চিন্তা করা
৯) বিভিন্ন রোগ, যেমনঃ ডায়াবেটিস, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা টিউমার, থাইরয়েডের সমস্যা, অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার, কাঁপুনিজনিত রোগ, স্নায়ু রজ্জুতে আঘাত, দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ ইত্যাদি হওয়া
১০) দীর্ঘদিন বিছানায় শুয়ে থাকা
১১) বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, যেমনঃ ডায়রিয়া বন্ধের ওষুধ, পেট ব্যথার ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, পেপ্টিক আলসার এর ওষুধ, খিঁচুনির ওষুধ, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম সমৃদ্ধ ওষুধ সেবন করা

কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ / উপসর্গ কি কি?

১) স্বাভাবিক এর চেয়ে কম সংখ্যকবার মলত্যাগ করা
২) ছোট, শুষ্ক, শক্ত পায়খানা হওয়া
৩) মল ত্যাগে অত্যন্ত কষ্ট হওয়া
৪) পায়খানা করতে অধিক সময় লাগা
৫) পায়খানা করতে অধিক চাপের দরকার হওয়া
৬) অধিক সময় ধরে পায়খানা করার পরও পূর্ণতার অনুভূতি না আসা
৭) পেট ফুলে থাকা
8) আঙুল, সাপোজিটরি কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমের সাহায্যে পায়খানা করা
৯) মলদ্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথার অনুভব হওয়া
১০) মলদ্বারে চাপের অনুভূতি হওয়া।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে লাইফস্টাইল পরিবর্তনঃ

১) মলত্যাগের বেগ হোক বা না হোক প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে টয়লেটে বসবেন, এতে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ঐ সময়ে মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে উঠবে।
২) দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন
৩) নিয়মিত হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়াম করুন
৪) কোন রোগের জন্য হয়ে থাকলে তার জন্য চিকিৎসা নিন
৫) কোন ওষুধ সেবনের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে মনে হলে সে ব্যাপারে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কোষ্ঠকাঠিন্যে যা করা উচিৎ নয়ঃ

১) পায়খানার বেগ ধরলেও নানা অজুহাতে দেরি করা
২) নিয়মিত পায়খানা নরম করার বিভিন্ন রকমের ওষুধ সেবন ও ব্যবহার করা

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনঃ

১) সহজপাচ্য ও সাধারণ খাদ্যে অভ্যস্ত হোন
২) বেশি করে পানি পান করুন, প্রতিদিন কমপক্ষে দুই লিটার।
৩) কিছু গ্রহণীয় খাবারঃ
শাকসবজি, ফলমূল, সালাদ, দধি, পনির, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, লেবু ও এ জাতীয় টক ফল, পাকা পেপে, বেল, আপেল, কমলা, খেজুর, সব ধরণের ডাল, ডিম, মাছ, মুরগীর মাংস, ভূসিযুক্ত (ঢেঁকি ছাঁটা) চাল ও আটা
৪) কিছু বর্জনীয় খাবারঃ
গরু, খাসি ও অন্যান্য চর্বিযুক্ত খাবার, মসৃণ চাল, ময়দা, চা, কফি, সব ধরণের ভাজা খাবার যেমনঃ পরোটা, লুচি, চিপস ইত্যাদি

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বেঁচে থাকার প্রাকৃতিক কিছু উপায়ঃ

১) ইসবগুল ২ থেকে ৩ চা চামচ ১ গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে চিনি বা গুড় মিশিয়ে সাথে সাথে খাওয়া খালি পেটে ও রাতে ঘুমাবার আগে
২) পাকা মিষ্টি বরই চটকে বীজ ও খোসা ফেলে অথবা ছেঁকে অল্প পানি মিশিয়ে মাঝে মাঝে খাওয়া
৩) ১ গ্লাস পানিতে ২৫-৩০ গ্রাম পাকা বেলের শাঁস মিশিয়ে শরবত তৈরী করে দিনে ২ বার সেবন করা
৪) ফোটানো তেঁতুলের রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে শরবত তৈরী করে সেখান থেকে রাতে শোবার আগে এক টেবিল চামচ পান করা

কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা করা না হলে কি কি অসুবিধা হতে পারে? (কোষ্ঠকাঠিন্যের জটিলতা)

১) অর্শ বা পাইলস হওয়া
২) এনাল ফিশার বা মলদ্বারে আলসার হওয়া
৩) রেকটাল প্রোলেপস বা মলদ্বার বাইরে বের হয়ে আসা
৪) পায়খানা ধরে রাখতে না পারা
৫) খাদ্যনালীতে প্যাঁচ লাগা
৬) প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া
৭) মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়া
৮) খাদ্যনালীতে আলসার বা ঘা, এমনকি পারফোরেশন বা ছিদ্র হওয়া ।

কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসাঃ

১) সিরাপ লেকটুলোজ (বাজারে এভোলেক, অসমোলেক্স, টুলেক, লেকটু ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়) ২/৩ চামচ করে দিনে ৩ বার খাওয়া, তবে আগেই বলেছি এসব ওষুধ নিয়মিত খাওয়া ভালো নয়, ডাক্তারের পরামর্শ সাপেক্ষে খেতে হবে

২) ট্যবলেট. বিসাকডিল (বাজারে ডুরালেক্স, ডাল্কোলেক্স ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়) ৫ মিঃগ্রাঃ রাতে প্রয়োজন অনুপাতে ১/২/৩ টা সেবন করা, তবে তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ সাপেক্ষে

৩) এনাল ফিশার বা মলদ্বারে আলসার থাকলে এরিয়েন মলম বা সাপোসিটরি মলদ্বার ও তার আশপাশে দিনে ২/৩ বার ব্যবহার করা

৪) মল শক্ত হয়ে মলাশয়ে আটকে গেলে গ্লিসারিন সাপোসিটরি ১/২ টা মলদ্বারে ব্যবহার করা

৫) ২/৩ দিন পায়খানা না হলে বা মল শক্ত হয়ে গেছে মনে হলে পায়খানা করার আগে মলদ্বারে জেসোকেইন জেলি লাগিয়ে নেয়া, এতে রক্তপাত ও এনাল ফিশার বা মলদ্বারে আলসার এর সম্ভাবনা কমে যায়।

ফেইসবুকে আমাকে আপনার রোগ সম্পর্কে জানাতে লিখুন এখানেঃ

www.facebook.com/Medicalforallnet